জীবদেহে তিন ধরনের কোষ বিভাজন দেখা যায়, যথা- (১) অ্যামাইটোসিস (২) মাইটোসিস এবং (৩) মিয়োসিস। অ্যামাইটোসিস : এ
ধরনের কোষ বিভাজন ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, ছত্রাক, অ্যামিবা ইত্যাদি এককোষী জীবে হয়। এককোষী জীবগুলো অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে বংশবৃদ্ধি করে। এ ধরনের কোষ বিভাজনে নিউক্লিয়াসটি ডাম্বেলের আকার ধারণ করে এবং প্রায় মাঝ বরাবর সংকুচিত হয় ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। একই সময়ে সাইটোপ্লাজমও মাঝ বরাবর সংকুচিত হয়ে দুটি কোষে পরিণত হয়। এ ধরনের বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাই একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।
মাইটোসিস : উন্নত শ্রেণির প্রাণীর ও উদ্ভিদের দেহকোষ মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস একবার বিভাজিত হয়ে সমআকৃতির, সমপুর্ণ সম্পন্ন ও সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে প্রাণী এবং উদ্ভিদ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের বিভাজনের যারা উদ্ভিদের ভাজক টিস্যুর কোষের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে।
মিয়োসিস : জনন কোষ উৎপন্নের সময় মিয়োসিস কোষ বিভাজন ঘটে। এ ধরনের কোষ বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি পরপর দুবার বিভাজিত হলেও ক্রোমোজোমের বিভাজন ঘটে মাত্র একবার। ফলে অপত্য কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়। এ বিভাজনে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হ্রাস পায় বলে এ ধরনের বিভাজনকে হ্রাসমূলক বিভাজনও বলা হয়। ঘনন মাতৃকোষ থেকে পুং ও স্ত্রী গ্যামেট উৎপন্নের সময় এ ধরনের কোষ বিভাজন হয়।
মাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য
• মাইটোসিস কোব বিভাজন দেহকোবের এক ধরনের বিভাজন পদ্ধতি।
• এ প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি একবার মাত্র বিভাজিত হয়।
•মাতৃকোষটি বিভাজিত হয়ে সমগুণ সম্পন্ন দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে।
• এ ধরনের বিভাজনে মাতৃকোবের ক্রোমোজোম সংখ্যা এবং অগত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান থাকে অর্থাৎ ক্রোমোজোম সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে।
• এ ধরনের বিভাজনে প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে দুভাগে বিভক্ত হয়। ফলে সৃষ্ট নতুন কোষ দুটিতে ক্রোমোজোম সংখ্যামাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান থাকে। ভাই মাইটোসিসকে ইকুয়েশনাল বা সমীকরণিক বিভাজনও বলা হয়।
মাইটোসিস কোথায় হয়
মাইটোসিস বিভাজন প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবের দেহকোষে ঘটে। উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের ভাজক টিস্যু যেমন— কান্ত, মূলের অগ্রভাগ, ভূণমূল ও ভূণমূল, বর্ধনশীল পাতা, মূল ইত্যাদিতে এ রকম বিভাজন দেখা যায়। প্রাণিদেহের দেহকোষে, ভূণের পরিবর্তনের সময়, নিম্নশ্রেণির প্রাণীর ও উদ্ভিদের অযৌন জননের সময় এ ধরনের বিভাজন হয়।
কোন কোন কোষে মাইটোসিস বিভাজন ঘটে না প্রাণীর স্নায়ুটিস্যুর স্নায়ুকোষে, স্তন্যপায়ী প্রাণীর পরিণত লোহিত রক্ত কণিকা ও অনুচক্রিকা এবং উদ্ভিদের স্থায়ী টিস্যুর কোষে এ ধরনের বিভাজন ঘটে না৷ |
আরও দেখুন...